বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৩৪ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম:
মহিষাশুড়া ইউপি চেয়ারম্যান মুফতি কাউছারের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের মারধর ও হেনস্তার অভিযোগ নরসিংদীতে তরুণদের প্রযুক্তি উৎসব: আইসিটি অলিম্পিয়াড ২০২৫ অনুষ্ঠিত পাইকারচরে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য ক্যাম্প, চিকিৎসা পেলেন অসহায় রোগী মাধবদীর কবিরাজপুর গ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবীতে এলাকাবাসীর মানববন্ধন মাধবদীতে বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিএনপির বিজয় মিছিল ও সমাবেশ প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় বেসরকারি স্কুল অন্তর্ভুক্তির দাবিতে মাধবদীতে মানববন্ধন জাতীয়তাবাদী সাইবার দলের ১৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত হত্যা মামলায় নরসিংদী সদর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার রাতের আঁধারে মসজিদের সৌন্দর্য নষ্ট, ফুলের চারা কেটে ফেলল দুর্বৃত্তরা প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা: নতুন নিয়মে পুরনো শিক্ষার্থীরাই পাচ্ছে সুযোগ

মহিষাশুড়া ইউপি চেয়ারম্যান মুফতি কাউছারের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের মারধর ও হেনস্তার অভিযোগ

মো. আল-আমিন সরকার / ৬ পাঠক
প্রকাশকাল বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৩৪ পূর্বাহ্ন

নরসিংদী সদর উপজেলার মহিষাশুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুফতি কাউছার আহমেদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির ব্যাপারে সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে তিন সাংবাদিক মারধোর ও হেনস্তার শিকার হয়েছেন।

এ সময় চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে তাদের বহনকারী মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয় এবং মোবাইল, ক্যামেরা, মাইক্রোফোন, আইডি কার্ড ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী সংবাদকর্মীরা। একইসময় ঘটনাটিকে ভিন্ন খাতে চালিয়ে দিতে চেয়ারম্যান ও তার অনুসারীরা সাংবাদিকদেরকে আটকে রেখে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সাদা কাগজে সাক্ষর নিয়ে রাখেন ।এ ঘটনায় মাধবদী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

ভুক্তভোগী সংবাদকর্মীরা জানান, মহিষাশুড়া ইউপি চেয়ারম্যান মুফতি কাউছার আহমেদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে ইউপিতে সেবা নিতে আসা লোকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি নেওয়া, বিভিন্ন সময় চাল চুরি, জমি দখল, মানুষকে জিম্মি করা সহ নানা অপরাধের অভিযোগ করে আসছিলো ভুক্তভোগীরা।

এর প্রেক্ষিতে গত সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিকালে এসব বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে সরেজমিনে ইউনিয়ন পরিষদে যান  আনন্দ টিভির নরসিংদী জেলা প্রতিনিধি ও নরসিংদী জেলা রিপোর্টার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুজ্জামান, দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার মাধবদী প্রতিনিধি মো. জাকারিয়া এবং নিউজ টোয়েন্টি ওয়ান বাংলা টিভির স্টাফ রিপোর্টার মো. শাহিন মিয়া।

এ সময় পরিষদের সামনে একজন ভুক্তভোগীর সাক্ষাৎকার নিতে গেলে চেয়ারম্যান অফিসে বসে সিসিটিভিতে এটা প্রত্যক্ষ করেন এবং তার অনুসারীদের ডেকে আনেন। অবস্থা আঁচ করতে পেরে আনন্দ টিভির প্রতিনিধি মনিরুজ্জামান সহ বাকি দুই সাংবাদিক চেয়ারম্যানের কক্ষে গিয়ে এ ব্যাপারে কথা বলতে চাইলে চেয়ারম্যানের ডেকে আনা লোকজন তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে মারধোর করেন। এতে তিনজনই আহত হয়।

আহত সাংবাদিক মনিরুজ্জামান জানান, চেয়ারম্যানের সাঙ্গপাঙ্গদের হামলার একপর্যায়ে তিনি কোনোমতে জীবন বাঁচিয়ে ফিরে এলেও বাকি দুই সাংবাদিককে আটকে রাখা হয়। তাদেরকে মারধোরের পর অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে চেয়ারম্যানের নির্দেশে পরিষদের খালি প্যাডে জোরপূর্বক সাক্ষর নেয়া হয়। তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাটি মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নজরুল ইসলামকে অবগত করলে তিনি ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠান আর এই খবরে চেয়ারম্যান ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা দ্রুত পালিয়ে যায়।

খবর পেয়ে মাধবদী পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র সাংবাদিক মকবুল হোসেন সহ স্থানীয় অন্যান্য সংবাদকর্মীরা মহিষাশুড়া ইউপি কার্যালয়ে গিয়ে সাংবাদিকদের উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে সোমবার রাতে সাংবাদিক মনিরুজ্জামান বাদী হয়ে মাধবদী থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসীরা বলেন, চেয়ারম্যান একজন ‘স্বৈরাচার’ এবং ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ হিসেবে এলাকায় ‘রামরাজত্ব’ কায়েম করেছেন। চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সাদা কাগজে সাক্ষর নেওয়ার ঘটনা নতুন নয়। তার বিরুদ্ধে আদালতে বিভিন্ন অপরাধে মামলাও রয়েছে। তিনি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর নরসিংদী জেলা কমিটির সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্বে আছেন। তার বিভিন্ন অপকর্মের বিরুদ্ধে অভিযোগ দৃশ্যমান থাকার পরও পদ-পদবিতে তিনি বহাল তবিয়তেরয়েছেন। এলাকাবাসীর প্রশ্ন  তার খুটির জোর কোথায়???

সাংবাদিকদের ওপর এই হামলার ঘটনায় মাধবদী থানা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও নাগরিক টেলিভিশন এর নরসিংদী জেলা প্রতিনিধি শাওন খন্দকার শাহিন বলেন, “বিগত সময় এই অভিযুক্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ হওয়া সত্ত্বেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তার বিরুদ্ধে  রিলিফের চাল চুরি সহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ থাকলেও যেন দেখার কেউ নেই। এ ঘটনায় আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে মুফতি কাউছারের দলীয় পদ সহ ইউপি চেয়ারম্যানের পদ থেকে অব্যাহতি চাই।”

নরসিংদী জেলা রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি শফিকুল ইসলাম রিপন এই হামলার ঘটনায়  তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে দোষীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানান।

এছাড়াও মাধবদী থানা প্রেস ক্লাব সহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়।