বুধবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৫, ০৭:০২ অপরাহ্ন
প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতার এই সময়ে নিজস্ব মেধা, প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও উদ্ভাবনী ক্ষমতায় মিসাইল সিস্টেম মিলিটারি ড্রোন বানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া সহ সর্বমহলে প্রশংসায় ভাসছেন নরসিংদী জেলার মাধবদীর তরুণ উদ্ভাবক রাফি হোসাইন। আধুনিক এই মিলিটারি ড্রোন উদ্ভাবন করে ইতোমধ্যেই ৪৬তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলায় তিনি টানা তৃতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়নের খেতাব অর্জন করেছেন।
এর আগে ২০২৩ সালে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন ‘এক্সিডেন্ট প্রিভেনশন সিস্টেম’ এবং ২০২৪ সালে ‘জায়ান্ট মাল্টিপারপাস ড্রোন’ উদ্ভাবন করে রাফি জাতীয় পর্যায়ে প্রথমস্থান অধিকার করেন। ২০২৪ সালে জাতীয় পুরস্কার বিজয়ী তার উদ্ভাবিত আট ফুট দৈর্ঘ্যরে অক্টোকপ্টার মাল্টিপারপাস ড্রোনটি নিজস্ব প্রযুক্তিতে বাংলাদেশে নির্মিত সবচেয়ে বড় ড্রোনের স্বীকৃতি পায়। একই বছর ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে নরসিংদী জেলা প্রশাসন ড্রোনটির মাধ্যমে বৃহৎ সাইজের (৮*১৩.৪) একটি জাতীয় পতাকা আকাশে উড়িয়ে ব্যাপক প্রশংসা কুড়ান। ড্রোনটি বর্তমানে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যাদুঘরে শোভা পাচ্ছে।
এবারের মেলায় প্রদর্শিত ‘মিসাইল সিস্টেম মিলিটারি ড্রোন’টিও ব্যাপক আলোড়ণ সৃষ্টি করেছে। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ড্রোনটির খবর প্রচারিত হলে সোশ্যাল মিডিয়ায় তা ছড়িয়ে পড়ে। আর এতে নেটিজেনদের প্রশংসায় ভাসেন রাফি। রাফির ড্রোনটি দুই ডানায় দুটি মিসাইল বহন করতে সক্ষম এবং প্রায় ৪০ হাজার মিটার রেঞ্জে সার্ভিল্যান্স ও টার্গেটেড অ্যাটাক পরিচালনা করতে সক্ষম বলে তার দাবি।
ড্রোনটি একনজর দেখতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর প্রাঙ্গণে আয়োজিত এই মেলায় দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। ড্রোনটি পরিদর্শন করেন সরকারের অন্তর্বতীকালীন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের মহাপরিচালক, এবং জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের মহাপরিচালক মুনীরা সুলতানাসহ বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি। তাঁরা উদ্ভাবকদের উৎসাহিত করেন এবং তাদের উদ্ভাবনকে দেশের প্রযুক্তিখাতে বড় সম্ভাবনা হিসেবে উল্লেখ করেন।
মাধবদী এসপি ইনস্টিটিউশনের প্রাক্তন ছাত্র রাফি বর্তমানে গ্রীন ইউনিভার্সিটিতে ইলেক্ট্রিক ও ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে অধ্যয়নরত। একই সঙ্গে তিনি ‘নরসিংদী সায়েন্স অ্যান্ড রোবোটিক্স ল্যাব’-এর প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ছোটবেলা থেকেই প্রযুক্তির প্রতি গভীর আগ্রহ ও গবেষণামূলক মনোভাব তাকে একের পর এক সফল উদ্ভাবনের পথে এগিয়ে নিয়েছে।
তার অন্যতম উদ্ভাবনের তালিকায় রয়েছে:
রাফির গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘নরসিংদী সায়েন্স অ্যান্ড রোবোটিক্স ল্যাব’ ইতোমধ্যে জেলা, বিভাগীয় এবং উপজেলা পর্যায়ে অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেছে। তার টিম মেম্বার সানজিম হোসাইন আন্তর্জাতিকভাবে নাসা’র কনরাড চ্যালেঞ্জ এবং মালয়েশিয়ার প্রযুক্তি প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক পেয়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। এছাড়াও তার টিমের অন্যন্য সদস্য মাসনুন ফাহিম, দুর্জয় সাহা দীপ্ত, আব্দুল্লাহ আল মামুন, আমিরুল ইসলাম, নাজমুন নাহার, তানভীর ভুঁইয়া, আল-আমিন শিকদার, নাবিলও দলবদ্ধভাবে প্রতিটি উদ্ভাবনে নানামূখী সহযোগিতা করে প্রশংসনীয় ভুমিকা পালন করছেন।
রাফি বলেন, “সরকারি সহায়তা পেলে আমাদের এই ড্রোন আরও আধুনিক করা সম্ভব এবং এটি স্বল্প খরচে তৈরি করে সামরিক বাহিনীতে যুক্ত করা যেতে পারে। বর্তমানে যেখানে বিদেশ থেকে ড্রোন কিনতে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হয়, সেখানে আমাদের উদ্ভাবিত ড্রোন মাত্র ১০ লাখ টাকায় তৈরি করা সম্ভব।”
তিনি জানান, ড্রোনটির কাঠামো, ফেব্রিকেশন, প্রোগ্রামিং সবই তাদের নিজস্ব তৈরি হওয়ায় খরচ অনেক কমেছে। দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় অবদান রাখতে তিনি সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের সহায়তা কামনা করেছেন।
নেটিজেনদের অনেকে মনে করছেন, এই উদ্ভাবন শুধু একটি প্রযুক্তির গৌরব নয়, বরং দেশের আত্মনির্ভরশীলতার পথেও এক সাহসী পদক্ষেপ। তাঁরা রাফি ও তার দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন এবং ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা জানিয়েছেন।