বুধবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৫, ০৬:৫৯ অপরাহ্ন
নরসিংদীর মাধবদীতে ‘জুলাই আন্দোলনে’র (বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন) কর্মীদের টার্গেট করে হত্যার পরিকল্পনার অভিযোগে রিদওয়ান সরকার রাতুল নামে এক ছাত্রলীগ নেতাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে সাধারণ ছাত্ররা। অপরদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)’র গোয়েন্দা পুলিশের হাতে মাধবদী পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র মোশাররফ হোসেন প্রধান মানিক গ্রেপ্তার হয়েছে।
আটক রিদওয়ানের ফোন থেকে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগের চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়ার দাবি করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যরা। এই ঘটনায় মাধবদীর সাবেক মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন মানিকের জড়িত থাকারও অভিযোগ উঠেছে।
রবিরার ২৭ জুলাই দুপুর ৩টার দিকে মাধবদীতে রিদওয়ানকে দেখতে পেয়ে আটক করে ‘জুলাইযোদ্ধা’ হিসেবে পরিচিত একদল ছাত্র। তাদের ভাষ্যমতে, রিদওয়ানের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন পরীক্ষা করে হোয়াটসঅ্যাপ ও মেসেঞ্জারের বিভিন্ন তথ্য থেকে তারা জানতে পারেন যে, নরসিংদীর আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে যোগসাজশে জুলাই আন্দোলনের কর্মীদের হত্যার পরিকল্পনা করা হচ্ছিলো। তাদের অভিযোগ, আন্দোলনকারী যোদ্ধাদের ছবি তালিকাভুক্ত করে তাদের নামে ‘জঙ্গি’ অপবাদ দেওয়ারও ষড়যন্ত্র চলছিল।
ঘটনার নাটকীয়তা বাড়ে যখন ছাত্রদের হাতে আটক থাকা অবস্থাতেই রিদওয়ানের ফোনে মাধবদীর সাবেক মেয়র মোশাররফ হোসেন মানিকের কল আসে। ছাত্ররা রিদওয়ানকে দিয়েই ফোনটি রিসিভ করালে হত্যার পরিকল্পনার বিষয়ে আরও তথ্য জানতে পারে বলে তারা দাবি করেন। পরে, রিদওয়ানকে মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও সার্কেল এসপির কাছে হস্তান্তর করা হয়।
আন্দোলনকারী ছাত্ররা জানায়, রিদওয়ান বিগত সময়ে বিরিকান্দি গ্রামে আনোয়ার কমিশনারের ছত্রছায়ায় বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সাথে জড়িত ছিল। ২০১৯ সালের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, শেখ রাসেল শিশু কিশোর পরিষদ মাধবদী শহর শাখার সভাপতি মো. রিদওয়ান সরকার রাতুল এক হামলায় আহত হয়েছিলেন এবং তিনি তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেনের (সাবেক কমিশনার) সমর্থক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। পরবর্তীতে তাদের দলীয় আভ্যন্তরীন কোন্দলের জেরে তিনি মেয়র মোশাররফ গ্রুপে যোগ দেন।
গত জুলাইয়ের ক্ষত না শুকাতেই আবারও এই জুলাইয়ে এমন ষড়যন্ত্রের ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত বছরের জুলাই মাসে এই আন্দোলন নরসিংদীতে ব্যাপক আকার ধারণ করে, যেখানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, জেলা কারাগারে হামলা, অগ্নিসংযোগ এবং অস্ত্র লুটের মতো ঘটনা ঘটে। এই আন্দোলন দমাতে পুলিশ ব্যাপক ধরপাকড় চালায় এবং শত শত ছাত্রের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। অনেক আন্দোলনকারী ছাত্রকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়কার দুটি হত্যা মামলা এবং আওয়ামী লীগ আমলে একটি হত্যাচেষ্টার মামলায় গত রোববার রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকা থেকে মাধবদীর সাবেক মেয়র মোশাররফ হোসেন প্রধান মানিককে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
ডিএমপির পক্ষ থেকে মানিককে গ্রেপ্তারের তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে বলে সাংবাদিকদেরকে জানিয়েছেন নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কলিমুল্লাহ।
মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম জানান, সাবেক মেয়র মোশাররফ হোসেন প্রধান মানিকের বিরুদ্ধে গত বছর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর দুটি হত্যা ও আওয়ামী লীগের আমলে একটি হত্যাচেষ্টাসহ তিনটি মামলা রয়েছে।
তাঁর বিরুদ্ধে চারটি মামলা ছিল, যার মধ্যে একটি থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। সরকার পতনের পর থেকে পলাতক ছিলেন মোশাররফ হোসেন প্রধান মানিক।
নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কলিমুল্লাহ বলেন, ‘গ্রেপ্তারের পর মোশাররফ হোসেন মানিককে মিন্টু রোডের ডিবির প্রধান কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে বলে আমাদের অবগত করা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে তাঁকে নরসিংদী জেলা পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হবে।
মেয়র মানিকের গ্রেপ্তারের দিনই ছাত্রলীগ নেতা রিদওয়ানের মাধ্যমে নতুন করে হত্যার পরিকল্পনার তথ্য ফাঁস হওয়ায় মাধবদীতে আন্দোলনকারী ছাত্রদের মধ্যে উদ্বেগ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।