শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ০২:৩৭ অপরাহ্ন

শিরোনাম:
মাধবদীতে চালু হলো রয়েল কেক: মানসম্মত খাবার ও রকমারি মিষ্টান্নের নতুন ঠিকানা নরসিংদীর শিবপুরে পবিত্র আজিমুশ্বান ইসলামী জলসা অনুষ্ঠিত সুজন নরসিংদী জেলা কমিটি পুনর্গঠন ও পরিকল্পনা সভা অনুষ্ঠিত মনোহরদীতে সাংবাদিক শাকিলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ গণপিটুনীতে মাদক কারবারী নিহতের ঘটনাকে রাজনৈতিক রং লাগাতে একটি মহলের অপচেষ্টা: এস আলমের নিয়োগকৃতদের ছাঁটাইয়ের দাবিতে ইসলামী ব্যাংক মাধবদী শাখার সামনে মানববন্ধন চরদীঘলদী ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক সহ ৩ সদস্যকে কারণ দর্শানোর নোটিশ নরসিংদী জেলা পুলিশের সফল অভিযান, এক সপ্তাহে হত্যাকাণ্ডের আসামীসহ ২০০ জনের অধিক আসামী গ্রেফতার মহিষাশুড়া ইউপি চেয়ারম্যান মুফতি কাউছারের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের মারধর ও হেনস্তার অভিযোগ নরসিংদীতে তরুণদের প্রযুক্তি উৎসব: আইসিটি অলিম্পিয়াড ২০২৫ অনুষ্ঠিত

নরসিংদীতে জাতীয় ফল কাঁঠালের বাম্পার ফলন || কৃষকের দীর্ঘশ্বাস

মো. নুর আলম / ২৩৬ পাঠক
প্রকাশকাল শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ০২:৩৭ অপরাহ্ন

বাংলাদেশের “কাঁঠালের রাজধানী” হিসেবে পরিচিত নরসিংদী জেলায় এবারও কাঁঠালের বাম্পার ফলন হয়েছে। মাধবদী, শিবপুর, বেলাব, মনোহরদী ও রায়পুরার বাগান থেকে শুরু করে প্রায় প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় এখন শোভা পাচ্ছে জাতীয় ফল কাঁঠাল।

  • বিপুল উৎপাদনেও মিলছে না দাম, প্রক্রিয়াজাতকরণের অভাবে নষ্ট হচ্ছে হাজার কোটি টাকার সম্ভাবনা……

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ বছর জেলার প্রায় ৫,৮০০ হেক্টর জমিতে কাঁঠালের চাষ হয়েছে, যেখান থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ২ লক্ষ ৮০ হাজার মেট্রিক টন।  কিন্তু এই বিপুল উৎপাদন কৃষকের মুখে হাসি ফোটানোর বদলে হয়ে উঠেছে দুশ্চিন্তার কারণ। প্রাচুর্য যেন অভিশাপে পরিণত হয়েছে। এতে লাভ তো দূরের কথা, পরিবহন খরচ তুলতেই হিমশিম খাচ্ছেন তারা।

কাঁঠালের মৌসুমে নরসিংদীর স্থানীয় হাটগুলো কাঁঠালে সয়লাব হয়ে যায়। কিন্তু এই বিপুল জোগানই যেন কৃষকের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাধবদী বাজারের প্রবীণ কৃষক ও মৌসুমী ফল ব্যবসায়ী আফতাব উদ্দিন হতাশার সুরে বলেন, ” ১০০টা কাঁঠাল হাটে আনতে যে ট্রাক ভাড়া লাগে, বেচাকেনার পর সেই টাকাও পকেটে থাকে না। এমন দুর্দিন আগে দেখিনি। এখন একটা বড় সাইজের কাঁঠাল ৩০-৪০ টাকার বেশি দামে বেচা যায় না।” তার এই বক্তব্যই যেন পুরো জেলার কাঁঠাল চাষিদের সম্মিলিত আর্তনাদ।

এই পরিস্থিতির পেছনে একাধিক কারণ বিদ্যমান। প্রথমত, ২০০৪ সালের বন্যার পর থেকে জেলাজুড়ে কাঁঠাল গাছের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই এখন কাঁঠাল গাছ থাকায় স্থানীয় চাহিদা কমে গেছে, ফলে বাজারে এর কদর নেই। দ্বিতীয়ত, খাওয়ার পদ্ধতি কিছুটা ঝামেলার হওয়া এবং গরম আবহাওয়ার কারনে আধুনিক শহুরে জীবনে ও নতুন প্রজন্মের কাছে এর আবেদন অনেকটাই ফিকে হয়ে এসেছে।
সবচেয়ে বড় সংকট তৈরি হয়েছে প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের অভাবে।

কাঁঠাল আকারে বড় ও ওজনে ভারী হওয়ায় তাজা ফল হিসেবে এর রপ্তানি অত্যন্ত ব্যয়বহুল। যেখানে ভিয়েতনাম, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইনস ও থাইল্যান্ডের মতো দেশগুলো কাঁঠালের চিপস, ক্যান্ডি ও ক্যানড পণ্য তৈরি করে বিশ্ববাজার থেকে কোটি কোটি ডলার আয় করছে, সেখানে বাংলাদেশে এই শিল্পের কোনো বিকাশই ঘটেনি। পশ্চিমা বিশ্বে মাংসের বিকল্প হিসেবে কাঁচা কাঁঠালের বিপুল চাহিদা থাকলেও সেই সুযোগ নিতে পারছে না বাংলাদেশ।

কৃষি অর্থনীতিবিদরা বলছেন, কাঁঠাল শুধু একটি ফল নয়, এটি একটি শিল্প। এর কোষ, খোসা, বীজ—সবকিছুই ব্যবহারযোগ্য। এই বাজার ধরতে পারলে কাঁঠাল হতে পারতো দেশের অন্যতম রপ্তানি পণ্য।
পর্যাপ্ত হিমাগারের অভাব, দুর্বল সাপ্লাই চেইন এবং সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের অভাবে নরসিংদীর এই সোনালী সম্ভাবনা আজ কৃষকের দীর্ঘশ্বাস আর অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে। স্থানীয় চাষিরা মনে করেন, সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা স্থাপন করা না গেলে আগামী দিনে নরসিংদীর ঐতিহ্যবাহী এই ফল চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন তারা