শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ০১:৩৯ অপরাহ্ন

শিরোনাম:
মাধবদীতে চালু হলো রয়েল কেক: মানসম্মত খাবার ও রকমারি মিষ্টান্নের নতুন ঠিকানা নরসিংদীর শিবপুরে পবিত্র আজিমুশ্বান ইসলামী জলসা অনুষ্ঠিত সুজন নরসিংদী জেলা কমিটি পুনর্গঠন ও পরিকল্পনা সভা অনুষ্ঠিত মনোহরদীতে সাংবাদিক শাকিলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ গণপিটুনীতে মাদক কারবারী নিহতের ঘটনাকে রাজনৈতিক রং লাগাতে একটি মহলের অপচেষ্টা: এস আলমের নিয়োগকৃতদের ছাঁটাইয়ের দাবিতে ইসলামী ব্যাংক মাধবদী শাখার সামনে মানববন্ধন চরদীঘলদী ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক সহ ৩ সদস্যকে কারণ দর্শানোর নোটিশ নরসিংদী জেলা পুলিশের সফল অভিযান, এক সপ্তাহে হত্যাকাণ্ডের আসামীসহ ২০০ জনের অধিক আসামী গ্রেফতার মহিষাশুড়া ইউপি চেয়ারম্যান মুফতি কাউছারের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের মারধর ও হেনস্তার অভিযোগ নরসিংদীতে তরুণদের প্রযুক্তি উৎসব: আইসিটি অলিম্পিয়াড ২০২৫ অনুষ্ঠিত

মাধবদীর হাটে অস্বাস্থ্যকর ও মেয়াদহীন খাদ্যের রমরমা ব্যবসা

মো. নুর আলম / ১১২ পাঠক
প্রকাশকাল শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ০১:৩৯ অপরাহ্ন

নরসিংদীর মাধবদীতে সোমবারের সাপ্তাহিক হাটে অবাধে বিক্রি হচ্ছে মেয়াদহীন, নিম্নমানের ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখা মুখরোচক খাবার। প্রচলিত ব্র্যান্ডেড পণ্যের চেয়ে দাম অর্ধেকেরও কম হওয়ায় এসব খাবারের প্রধান ক্রেতা গ্রামের সহজ-সরল নারী ও কোমলমতি শিশুরা।

এসব খাবার খেয়ে শিশুরা প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়ছে, বাড়ছে ডায়রিয়া, পেট ব্যথা ও বমির মতো রোগের প্রকোপ। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে, এই রমরমা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ নেই, নেই কোনো তদারকি।

সরেজমিনে মাধবদীর সাপ্তাহিক হাটে গিয়ে দেখা যায়, লাল ত্রিপল টানিয়ে স্টলগুলোতে প্লাস্টিকের বস্তা ও পলিথিনে খোলামেলাভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে চিপস, চানাচুর, বিভিন্ন ধরনের বিস্কুট, আচার ও রঙিন ক্যান্ডি। মাটির স্যাঁতসেঁতে রাস্তার পাশেই প্লাস্টিকের ক্রেটের উপর রাখা এসব পণ্যে ধুলোবালি পড়ছে। বেশিরভাগ পণ্যের প্যাকেটের গায়ে নেই কোনো উৎপাদন বা মেয়াদের তারিখ। কিছু পণ্যে থাকলেও তা অস্পষ্ট বা মেয়াদ পেরিয়ে গেছে বহু আগেই।

এই হাটটি আশেপাশের প্রতন্ত অঞ্চলের খুচরা বিক্রেতাদের জন্য একটি প্রধান পাইকারি কেন্দ্র। এখান থেকে কম দামে পণ্য কিনে তারা গ্রামের ছোট ছোট দোকানগুলোতে বিক্রি করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন খুচরা বিক্রেতা বলেন, “আমরা কম দামে পাই, তাই বিক্রিও করতে পারি কম দামে। গ্রামের মানুষ বেশি দাম দিয়ে ভালো জিনিস কিনতে চায় না। পরিমাণে বেশি পেলে তারা খুশি। মেয়াদ আছে কি না, তা আমরাও জানি না, আর ক্রেতারাও জিজ্ঞেস করে না।”

হাটে বাজার করতে আসা আমেনা বেগম নামের একজন অভিভাবক বলেন, “বাচ্চারা বায়না ধরে, তাই এখান থেকে মাঝে মাঝে চিপস কিনে দিই। গত সপ্তাহেও দিয়েছিলাম, এরপর থেকেই ছেলের পেট খারাপ। ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার পর ডাক্তার বাইরের খোলা খাবার খাওয়াতে নিষেধ করেছেন।”

এই বিষয়ে স্থানীয় চিকিৎসক ডা. ফজলুল হক উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “ইদানীং শিশুদের মধ্যে পেটের পীড়া ও ফুড পয়জনিংয়ের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। প্রতি ২০ জন রুগির মধ্যে ১৫ জন শিশুরই পেটে সমস্যা। এর অন্যতম কারণ হলো বাজারের নিম্নমানের ও রঙিন খোলা খাবার। এগুলোতে ব্যবহৃত রঙ, কেমিক্যাল ও পচা তেল শিশুদের লিভার ও কিডনির জন্য মারাত্মক হুমকি। দীর্ঘমেয়াদে এগুলো ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়ায়।”

ক্রেতাদের আকর্ষণ করতে বিক্রেতারা চটকদার কথা বললেও পণ্যের মান নিয়ে প্রশ্ন করলে এড়িয়ে যান। একজন বিক্রেতা বলেন, “সবাই কেনে, তাই আমরাও বেচি। কোনো সমস্যা তো হয় না।”
জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে ওঠা এই ব্যবসার বিরুদ্ধে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বা স্থানীয় প্রশাসনের কোনো অভিযান না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সচেতন মহল।

তারা মনে করেন, শিশুদের স্বাস্থ্য নিয়ে এই অবহেলা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপের মাধ্যমে এই অস্বাস্থ্যকর খাদ্যের প্রসার বন্ধ করা এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। অন্যথায়, জনস্বাস্থ্য এক ভয়াবহ হুমকির মুখে পড়বে।