শনিবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৫, ০৫:৩৬ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম:
পাইকারচরে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য ক্যাম্প, চিকিৎসা পেলেন অসহায় রোগী মাধবদীর কবিরাজপুর গ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবীতে এলাকাবাসীর মানববন্ধন মাধবদীতে বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিএনপির বিজয় মিছিল ও সমাবেশ প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় বেসরকারি স্কুল অন্তর্ভুক্তির দাবিতে মাধবদীতে মানববন্ধন জাতীয়তাবাদী সাইবার দলের ১৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত হত্যা মামলায় নরসিংদী সদর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার রাতের আঁধারে মসজিদের সৌন্দর্য নষ্ট, ফুলের চারা কেটে ফেলল দুর্বৃত্তরা প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা: নতুন নিয়মে পুরনো শিক্ষার্থীরাই পাচ্ছে সুযোগ ছাত্র হত্যার পরিকল্পনা ফাঁস, মাধবদীর সাবেক পৌর মেয়র মানিক ও ছাত্রলীগ নেতা আটক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জাকির হোসেন ভূইয়া ফাউন্ডেশনের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ

মাধবদীতে রাস্তায় পঁচে নষ্ট হচ্ছে কোরবানির চামড়া

মো. নুর আলম / ৬৬ পাঠক
প্রকাশকাল শনিবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৫, ০৫:৩৬ পূর্বাহ্ন

মাধবদীতে ঢাকা সিলেট মহাসড়কের পাশে পড়ে আছে সারি সারি চামড়ার স্তুপ। ঈদের দুইদিন পেরিয়ে গেলেও মিলেনি কাঙ্ক্ষিত ক্রেতা। তাই রাস্তায় পড়েই নষ্ট হচ্ছে অসহায় এতিমদের হক। আর এতেই আনন্দ ম্লান হয়ে গেছে নরসিংদী জেলার মাধবদীর চামড়া ব্যবসায়ীদের সাথে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের।

সরকার কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিলেও মাঠ পর্যায়ে তার কোনো প্রতিফলন নেই। ক্রেতা সংকটের কারণে হাজার হাজার পিস চামড়া অবিক্রিত রয়ে গেছে। সময়মতো বিক্রি ও সংরক্ষণ করতে না পারায় রাস্তার ধারে এবং বিভিন্ন মাদ্রাসার সামনে স্তূপ করে রাখা চামড়ায় পচন ধরতে শুরু করেছে। এতে একদিকে যেমন পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, অন্যদিকে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে স্থানীয় মাদ্রাসা, এতিমখানা ও মৌসুমী ব্যবসায়ীরা।

সরকার এ বছর ঢাকায় গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৬০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৫০-৫৫ টাকা নির্ধারণ করে। সেই হিসাবে একটি মাঝারি আকারের গরুর চামড়ার দাম দাঁড়ায় প্রায় ১৩০০ টাকা। কিন্তু মাধবদীর চিত্র ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। বিক্রেতারা জানান, ঈদের দিন বিকেলে কিছু ক্রেতা পাওয়া গেলেও তারা দাম বলেছেন ২০০ থেকে ৬৫০ টাকার মধ্যে, যা সরকার নির্ধারিত দামের তুলনায় নগণ্য।

কিন্তু সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই সেই ক্রেতারাও উধাও হয়ে যায়। অনেক মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ও মৌসুমী বিক্রেতারা রাত ২টা পর্যন্ত চামড়া নিয়ে ক্রেতার জন্য অপেক্ষা করেন, কিন্তু কোনো পাইকার বা আড়তদারের দেখা মেলেনি।

এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী এলাকার মাদ্রাসা ও এতিমখানাগুলো। সাধারণ মানুষ তাদের কোরবানির চামড়া এসব প্রতিষ্ঠানে দান করেন। এই চামড়া বিক্রির টাকা দিয়েই প্রতিষ্ঠানগুলোর সারা বছরের খরচের একটি বড় অংশ মেটানো হয়।

মাধবদীর একটি মাদ্রাসার মুহতামিম আক্ষেপ করে বলেন, “মানুষ সওয়াবের আশায় আমাদের চামড়া দান করে। কিন্তু আমরা যদি বিক্রিই করতে না পারি, তাহলে এতিম ছাত্রদের খাওয়াবো কী? চামড়া পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে, এখন এগুলো ফেলে দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় দেখছি না। শুধু ঈদের দিনের চামড়াই নয়, ঈদের পরদিন সংগৃহীত চামড়াগুলোও একই পরিণতির দিকে এগোচ্ছে। সেগুলোও ফেলে দেওয়ার উপক্রম হয়েছে।

অন্যদিকে, মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীর সংখ্যাও তুলনামূলকভাবে কম দেখা গেছে। এর কারণ হিসেবে জানা যায়, বেশিরভাগ মানুষ সরাসরি মাদ্রাসায় চামড়া দান করায় মৌসুমী ব্যবসায়ীরা পর্যাপ্ত চামড়া সংগ্রহ করতে পারেননি। ফলে একটি সমন্বিত ব্যবস্থাপনার অভাবে মূল্যবান এই জাতীয় সম্পদ এখন আবর্জনায় পরিণত হতে চলেছে।

স্থানীয়দের মতে, প্রতি বছরই একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট ইচ্ছাকৃতভাবে দাম কমিয়ে দেয় এবং কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। সরকারের পক্ষ থেকে দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও মাঠ পর্যায়ে নজরদারির অভাবে তা কার্যকর হয় না। দ্রুত এই সমস্যার সমাধান না হলে দেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় চামড়া শিল্প বড় ধরনের সংকটে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।